অপূর্ব সরকার
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
সমুদ্র ও নদীতে জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা নিষিদ্ধ এবং ইলিশের পুনরুদ্ধার এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ চলছে সেই লক্ষে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত একটি নিষেধাজ্ঞা প্রণয়ন করা হয়।সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক জেলেদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে ৮০ কেজি চাল প্রদান করে মৎস অধিদপ্তরে। তবে, ইউপি সদস্যরা জেলেদের সেই চাল নিয়ে নানান অনিয়ম এবং দুর্নীতি চালাচ্ছেন।সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এই ইউনিয়নে মোট ১৭৪৮ জন জেলের নিবন্ধিত বসবাসী আছেন। তাদের মধ্যে ১৪৫০ জনের খাদ্যসহায়তার জন্য ১১৬ টন চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে। তবে জেলের জন্য বরাদ্ধকৃত চাল নিয়ে নানান অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ স্থানীয় ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে।
সরোজমিনে দেখা যায় যে, গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ধুলাসার ইউনিয়নে জেলেদের জন্য ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্ধ থাকলেও সেখানে দেয়া হচ্ছে অর্ধেক এরও কম। এর যথাযথ তথ্য রয়েছে। জেলে মোঃ হেলাল বিশ্বাস বলছেন যে তিনি একটি বস্তা চাল পেয়েছেন যা ওজন ৫০ কেজির মতো হতে পারে। তার কি পরিমাণ চাল পাওয়ার কথা তা তিনি জানান চেষ্টা করেও জানাতে পারেননি। জেলেদের জনসংখ্যা অনুযায়ী সরকারি ভাবে ৮০ কেজি চাল বরাদ্ধ আছে কিন্তু সেটি কোন উদ্দেশ্যে পায়নি বা পরে পাবেন কিনা সেটি তিনি জানেন না। জেলে মোঃ জামাল ভূঁইয়া জানান, ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর উদ্দিন দালাল বলছে তাদের ছয়জনকে ৫০ কেজির ৫ বস্তা চাল দিয়ে বাড়ি নিয়ে তোমরা ৬ জনে ভাগ করে নিবে। এবিষয়ে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর উদ্দিন বলেছেন, আমার ওয়ার্ডে কোন চাল কম দেওয়া হয়নি। তিনি এই বিষয়ে আর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি নন। এদিকে ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ও ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য এবং প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাদুর ভূঁইয়ার কাছে জেলেদের চাল বিতরণ নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা ক্যামেরার সামনে কোন কথা বলতে রাজি হননি। এসময় তারা সংবাদিকদের বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালায়। চাল বিতরনের বিষয়ে ধুলাসার ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, “আমি অসুস্থ থাকা অবস্থায় সকালে পরিষদে গিয়ে ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে চাল বুঝিয়ে দিয়েছি। এরপর তারা কী করেছে তা আমি জানিনা। যদি চাল নিয়ে কোন অনিয়ম হয় থাকে তাহলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” চাল বিতরনের সময় মৎস অফিসের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা ছিল কিন্তু সেখানে কানো প্রতিনিধি উপস্থিতি হয়নি। তবে কলাপাড়া উপজেলা মৎস কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, চাল বিতরনের সময় সাধারণতঃ ট্যাগ অফিসার ও আমাদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে। তবে আমারা সংসদ সদস্য মহোদয়ের সাথে একটি প্রোগ্রাম ছিল তাই প্রথম পর্যায়ে আমাদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারেনি। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে আমাদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল।
তিনি আরও বলেন, চাল বন্টন নিয়ে ট্যাগ অফিসারের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন প্রত্যেক জেলেকে কে ৮০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। কাউকেই চাল কম দেয়া হয়নি। তবে একজনকেও যদি চাল কম দেয়া হয়, তাহলে সে তথ্য আমাদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। সরকারি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ধুলাসার ইউপিতে ট্যাগ অফিসার কলাপাড়া উপজেলা এলজিইডির ইউডিবিও আব্দুল আউয়াল আকনের কাছে, জেলেদের নামের ভিজিএফের চাল নিয়ে এতবড় অনিয়ম এবং দূর্নীতি কেন হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে সে বলেন চাল বিতরন কোন অনিয়ম বা দূর্নীতি হয়নি। তবে আমি সব কিছু তদন্ত করে পরবর্তীতে আপনার কাছে পরিপূর্ণ বক্তব্য দিব।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান যে কলাপাড়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি সমস্যার কারণ অনুসন্ধানে।
কমেন্ট করুন